সাতক্ষীরা পৌরসভার স্থায়ী জলাবদ্ধতা দূর করতে মাছখোলা এলাকার গদাইবিলে সেচ পাম্প দিয়ে পানি নিস্কাশন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে সাতক্ষীরার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কায়ছারুজ্জামান হিমেলের নেতৃত্বে ১০টি সেচ পাম্প বসিয়ে পানি অপসারণের উদ্বোধন করেন সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি।
সাতক্ষীরা পৌরসভার ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডসহ মাছখোলার গদখিবিল এলাকার প্রায় এক হাজার একর কৃষি জমি স্থায়ী জলাবদ্ধতায় তলিয়ে গেছে। সারা বছরই এ এলাকার মানুষ স্থায়ী জলাবদ্ধতা ও নানা দুর্ভোগের শিকার হয়। অতীতে এ এলাকার মানুষ কৃষি জমিতে ফসল ফলাতে পারত। বেতনা ও মারিছাপ নদীর জমি অবৈধ দখল, জাল পাতা ও অপরিকল্পিত মাছের ঘেরের কারণে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ কারণে কৃষকরা ফসল ফলাতে পারছেন না। এছাড়া বৃষ্টি নামলেই দুর্ভোগ নিয়ে বসবাস করতে হয় এলাকার মানুষকে। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে সেচ পাম্পের মাধ্যমে পানি অপসারণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
পানি অপসারণের উদ্বোধনকালে পৌর মেয়র বলেন, সাতক্ষীরার প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। এই জলাবদ্ধতার কারণে বিশেষ করে আমাদের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পানির নিচে থাকে। এর একটি অংশ হল আমরা সেই এলাকায় দাঁড়িয়ে আছি। এ গদাইবিল মাছের ঘের এলাকার মানুষ জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। হালকা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। আজ আমরা ০১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিমেলের নেতৃত্বে গাদাইবিল নিরাপত্তা কমিটির যৌথ উদ্যোগে এবং ঘের ও পাম্প হাউসের মালিকসহ এলাকার বাসিন্দাদের যৌথ উদ্যোগে সরকারের সহযোগিতায় ১০টি সেচ পাম্প স্থাপন করেছি। আশা করছি জলাবদ্ধতা থেকে এলাকাবাসী শিগগিরই মুক্তি পাবে। আমরা ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর সাথে কথা বলেছি। তারা বেতানা ও মারিছাপ নদীর টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। ফেব্রুয়ারির শেষ বা মার্চের শুরুতে খনন কাজ শুরু হবে। এই খালটি পুনরায় খনন করে ১০টি মেশিন চালু করা হলে এলাকায় জলাবদ্ধতা থাকবে না।
এছাড়া এলাকার কৃষকরা এই খাল খনন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করলে ২-৩ বছর মানুষ এর সুফল পাবে। তাহলে কৃষকরা তাদের জমিতে ধান উৎপাদন করতে পারবে এবং ঘের মালিকদের পরিকল্পিতভাবে মাছ চাষ করতে হবে। আমরা স্থানীয় প্রশাসনের সাথে আইনশৃঙ্খলা সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে প্রতিটি ঘেরের মালিকদের নিজ উদ্যোগে ঘেরের পাশে ড্রেন করতে হবে এবং বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা এড়াতে ঘের মালিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
গদাই বিল রক্ষা কমিটির সভাপতি ও জেলা কৃষক লীগের সভাপতি মঞ্জুর হোসেন জানান, মাছখোলা, গোপীনাথপুর-তালতলা ও কাটিয়া এলাকায়ও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এ পানি নিষ্কাশন করা গেলে আগামীতে বোরো চাষের পাশাপাশি আমন চাষ করা সম্ভব। তবে আমরা জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান চাই। জলাবদ্ধতার কারণে মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আশ্বাস দিয়েছেন। আরেকটি সমস্যা হলো, কৃষি সেচ প্রকল্পের রেট প্রতি ইউনিট ৪.১৭ টাকা, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি আমাদের কাছ থেকে নিচ্ছে প্রতি ইউনিট বাণিজ্যিক হারে ৭ টাকা। কৃষি সেচ প্রকল্পে প্রতি ইউনিট ৪.১৭ টাকা নিলে কৃষকরা লাভবান হবেন।
এদিকে গদাই বিল রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছোলাইমান আহমেদ বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে আমাদের এলাকায় ধান চাষ হচ্ছে না। আমাদের দাবি বেতন-মরিচের নদী কাটতে হবে। আমাদের প্রধান ফসল ধান। আমরা ধান চাষ করতে চাই। জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের সহযোগিতা চাই। তাহলে আমরা 3টি ফসল সঠিকভাবে করতে পারব।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান বাবু সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। গদাই বিলে সেচ পাম্পের মাধ্যমে পানি অপসারণের উদ্বোধনকালে লাবসা ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম, শেখ শাখাওয়াতুল করিম পিটুল, রাজিবুল্লাহ রাজু, রোকনুজ্জামান সুমন, আব্দুল আহাদ, মিজানুর রহমান, রেজাউল কাগজীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।