পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমরা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে উন্নয়নে কাজ করছি। বিশেষ করে অবকাঠামো ও সড়ক উন্নয়নের কাজ। মানুষ আপনার কাজের প্রতি আগ্রহী। মানুষ দ্রুত কাজ করতে চায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও আপনাদের কাজে আগ্রহী। তিনি একনেকে প্রকল্পটি ৫-৭ মিনিটে পাস করেন। আমরা আপনাদের সাথে কাজ করতে চেই। আমরা উন্নয়ন করতে চাই, আমরা আপনাদের বন্ধু।
শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সড়ক ভবন মিলনায়তনে ‘সোনার বাংলা গড়তে বঙ্গবন্ধুর যাত্রা: সহজ, টেকসই ও নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা’ শীর্ষক সেমিনারে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন, যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামসুল হক। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন শুধুমাত্র একটি (রাস্তা) কেন্দ্রিক হয়ে উঠছে। আজকের সেমিনারে সহজ, টেকসই এবং নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু আমি কোথাও সেই উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছি না। আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন আছে, কিন্তু টেকসই উন্নয়নে ফাঁক রয়েছে।
অধ্যাপক ড.শামসুল হক আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহুমাত্রিক উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে প্রথম পাঁচ বছরের পরিকল্পনা করেছিলেন। রেলপথ, নৌপরিবহন ও সড়কপথকে তিনি সমান গুরুত্ব দিতেন। কিন্তু পরে আমরা ওই জায়গা থেকে সরে গিয়ে রাস্তাটিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। হয়তো বা কখনও কখনও দাতা গোষ্ঠীর চাপে, বক্তব্য রাজনৈতিক বা জনগণের প্রত্যাশার উপর ভিত্তি করে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার বিকাশ কেন্দ্রীভূত হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশের প্রেক্ষাপটে ৮৪ শতাংশ যাত্রী সড়কে যাতায়াত করে। আর ৮৮ শতাংশ পণ্য পরিবহন হয় সড়কপথে। ফলে মানসিক চাপ ও ভোগান্তি বেশি হয়। তাই টেকসই উন্নয়নের জন্য যোগাযোগের সকল মাধ্যম ব্যবহার করতে হবে। আর টেকসই উন্নয়ন করতে হলে উন্নয়নের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।
উন্নয়নের বর্তমান গতিকে আধুনিক বলাটা অস্বস্তিকর বলে মন্তব্য করেন এই যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ। আমাদের রাস্তাঘাটের কোন অভাব নেই। এটি মোটাতাজা করার কোন প্রয়োজন নেই। আমরা এক কোণে আটকে আছি, যানজট আছে। এই সমস্যা আগে সমাধান করা আবশ্যক. অপ্রয়োজনীয় লেন বাড়ালে যানজট বাড়বে।
এ সময় তিনি বলেন, প্রকল্পের বেশির ভাগ কাজ জরিপ ও যাচাই-বাছাই ছাড়াই হয়েছে। তবে মাঠে না গিয়েই করা হয়।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টের সভাপতি স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, আমরা উন্নয়ন করছি কিন্তু বড় প্রশ্ন হলো এই উন্নয়নে কোনো সমন্বয় আছে কি না। আমাদের রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীতে কোনো সিগন্যাল লাইট জ্বলছে না। এর অন্যতম কারণ সমন্বয়ের অভাব। পৃথিবীর এমন কোনো রাজধানী নেই যেখানে প্রচুর যানজট থাকে। কিন্তু আমরা এখানে আছি। একই কোম্পানির বাস বেশি আয়ের জন্য রাস্তায় চলাচল করে মানুষকে পিষে দেয়। নগরীতে প্রতিনিয়ত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করছে সিটি করপোরেশন।
বিআরটিসি বাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “রাষ্ট্রীয় বাস বিআরটিসি হাইকোর্ট দেখবে। কার্জন দিনে দুবার ট্রিপ মেরে ঘুমায়।” আর পরিবহন সংকটে ভোগান্তিতে পড়েছে জনসাধারণ। এগুলো সবই সমন্বয়ের অভাব।
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন আরও বলেন, আমি খুবই ভাগ্যবান যে আমাদের রাজধানীতে পাঁচটি নদী আছে, কিন্তু সমন্বয় ও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে আমরা সেই নদীগুলোকে কাজে লাগাতে পারিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবহন ও মহাসড়ক সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, আজকের আলোচনায় অনেক বিষয় উঠে এসেছে। আমাদের অনেক ঘাটতি আছে যেগুলো আমরা সঠিকভাবে কাজ করব।
তিনি বলেন, সরকারি সংস্থাগুলোর কাছে বিআরটিসি বাসের বিশেষ চাহিদা রয়েছে, তাই তাদের কিছু বাসের ভাড়া দিতে হচ্ছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।
সেমিনারের আয়োজন করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রদূত (পূর্ব) মাসফি বিনতে শামস, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর প্রমুখ।