গত ২৩ শে ডিসেম্বর গভীর রাতে নদীর মাঝখানে পুড়ে যাওয়া এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটি এখনও সুগন্ধি জলে কঙ্কালের মতো ভাসছে। এখান থেকে এখনো পোড়া মানুষের গন্ধ বেরোচ্ছে। আগুন লাগার কয়েকদিন পর লঞ্চটি ঝালকাঠি লঞ্চ টার্মিনালে থাকলেও সেখান থেকে লঞ্চটি ঝালকাঠি ডিসি পার্ক সংলগ্ন সুগন্ধা নদীতে নিয়ে আসা হয়।
এটি ঝালকাঠির ডিসি পার্কের পাশে নোঙর করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে লঞ্চটি দেখে সবার মন কেঁপে ওঠে। লঞ্চের তিন তলা, প্রতিটি তলায় আগুনের চিহ্ন, কোথাও কালো ছাই, কোথাও কালো কয়লা। যাত্রীদের পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্র এখনও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। লঞ্চের ভেতরে পুড়ে যাওয়া মানুষের হাড় এখনো বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ঘটনার ২২ দিন অতিবাহিত হলেও লঞ্চের ভেতর থেকে পোড়া গন্ধ বের হচ্ছে।
লঞ্চের স্থানটি আবর্জনার স্তূপে ঘেরা, যা মাছি সহ বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়ের আবাসস্থল, যার গন্ধ কালো পেস্টের মতো। যাত্রীদের জন্য যে বয়াগুলো ছিল সেগুলো লঞ্চ নিজেই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, শুধু কঙ্কাল সাজানো হচ্ছে।
আবার অনেক কিছুই অক্ষত। নিচতলায় যেমন মির্জাগঞ্জের মরহুম ইয়ার উদ্দিন খলিফা (রহ.)-এর মাজারের দান বাক্স, যাত্রীর ব্যাগে পবিত্র কোরআন শরিফ, চায়ের দোকান। যদিও দোকানের আশপাশের এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কয়লায় একটি মিল্ক ফিডার অক্ষত পাওয়া গেছে, কিছু ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন পাওয়া গেছে যা চারপাশে আগুনে পুড়ে গেছে কিন্তু সেসব প্রেসক্রিপশনের কাগজের আগুনে কিছুই হয়নি।
লঞ্চের ইঞ্জিন রুম থেকে কেবিন রুম, ডেক এবং রান্নাঘর, সবকিছু ছিল – কিছুই আগুন থেকে রক্ষা পায়নি। জাহাজের বিভিন্ন অংশ তখনও তালাবদ্ধ ছিল, মানে লঞ্চটি চলাচলের এবং জ্বলতে থাকা অবস্থায় তারা তালাবদ্ধ ছিল। পদ ছাড়ার পর তিনি কী করবেন তা এই মুহূর্তে জানা যায়নি।
রাজু নামে একজন স্থানীয় কাঠমিস্ত্রি বলেন: “আমি সেই রাতে লঞ্চ থেকে অন্তত ৩৫ জন লোক নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে উঠেছিলাম।
বিআইডব্লিউটিসি ম্যানেজার (মেরিন) আল আমিন বলেন, পুড়ে যাওয়া লঞ্চের আসবাবপত্র আগুন নিরোধক ছিল না।
মঙ্গলবার পুড়ে যাওয়া লঞ্চটি পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিহির বিশ্বাস। তিনি বলেন, পুড়ে যাওয়া লঞ্চের ইঞ্জিনসহ সব কাঠামোতেই ত্রুটি রয়েছে। যে কারণে পুরো লঞ্চে আগুন ধরে যায়। মান বজায় রেখে লঞ্চের পরিকাঠামো ঠিক থাকলে আগুনে এত ক্ষয়ক্ষতি হতো না।
তিনি বলেন, ইঞ্জিন রুম নিরাপদ না থাকায় আগুন বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। লঞ্চের আসবাবপত্র অগ্নিরোধী নয় এবং পুড়ে যায়। মানুষ এখনো লঞ্চ থেকে পোড়া গন্ধ পাচ্ছে, লঞ্চের ভেতরে ময়লা-আবর্জনা জ্বালিয়ে এখন পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
ঝালকাঠি প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার প্রাথমিক অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন নদী নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংগঠন নোঙ্গার সভাপতি সুমন শামস। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘটনাটিকে পরিকল্পিত হত্যা বলা যেতে পারে। কারণ একটি লঞ্চের নিয়ম-নীতির সঙ্গে লঞ্চের কোনো সম্পর্ক ছিল না। লঞ্চের বিভিন্ন স্থানে আমরা এখনও তালা দেখতে পাই। আমার মনে হয় ওই সময় যারা ছিল তারা তালা ভেঙে বাইরে আসতে পারেনি, আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। এসব জায়গা থেকে আমরা প্রচুর দুর্গন্ধ পাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, লঞ্চটির পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা ও তদারকির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও অনিয়মের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।