সাতক্ষীরায় অর্ধকোটি টাকার তহবিল তছরুপের অভিযোগে ভোমরা সিএন্ডএফের আহ্বায় শেখ এজাজ আহমেদ স্বপনকে অপসারণ করে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের নতুন আহবায়ক নির্বাচিত হয়েছেন মিজানুর রহমান।

একদিনে যাতায়াত খরচ আড়াই লক্ষ টাকা দেখিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং ভোমরা কাস্টমস্ ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস্ এসোসিয়েশনের (রেজিঃ নং-খুলনা-২০৪৬) সাবেক আহ্বায়ক এজাজ আহমেদ স্বপন।

বিভিন্ন খাতে গত কয়েক মাসে প্রায় অর্ধকোটি টাকার তহবিল তচ্ছরুপ, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ একাধিক অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। ফলে স্বপনের প্রতি চরম ক্ষুব্ধ ভোমরা সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের আহবায়ক কমিটির সদস্যরা।

এদিকে, তহবিল তছরুপ, অনিয়ম ও স্বেচ্ছারিতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১১ এপ্রিল খুলনা বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক (রেজিস্ট্রার অব ট্রেড ইউনিয়ন্স) ভোমরা সিএ্ন্ডএফ এসোসিয়েশনের আহ্বায়কের পদ থেকে এজাজ আহমেদ স্বপনকে অপসারণ করে মিজানুর রহমানকে নতুন আহ্বায়কের দায়িত্ব প্রদান করেছে। গত ১২ এপ্রিল চার সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন এবং এসোসিয়েশন সচল রেখে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন সম্পন্ন করতে কার্যক্রম শুরু করেছেন।

অপরদিকে, বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের ওই আদেশকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাবেক আহ্বায়ক এজাজ আহমেদ স্বপন মিথ্যাচার করছেন এমন অভিযোগ বর্তমান আহবায়ক কমিটির অপরাপর সদস্যদের।

জানা গেছে, আহবায়ক কমিটি গঠনে সময় থেকে গত কয়েক মাসে ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাবেক আহ্বায়ক এজাজ আহমেদ স্বপন কমিটির অনুমোদন ছাড়াই প্রায় অর্ধকোটি টাকার তহবিল তচ্ছরুপ করেছেন। খবরটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। এছাড়া স্বপন একক সিদ্ধান্তে এসোসিয়েশনের কার্যক্রম পরিচালনা করায় কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। ফলে আহ্বায়ক কমিটির ১নং সদস্য মাকসুদ খানের সভাপতিত্বে গত ২৯ মার্চ আহ্বায়ক কমিটির ৪জন সদস্য জরুরি সভায় মিলিত হয়ে আহ্বায়ক এজাজ আহমেদ স্বপনের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনে তাকে পদ থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

গত ৫ এপ্রিল ওই সভার গৃহীত সিদ্ধান্তের রেজুলেশনের কপিসহ কমিটির সদস্য আশরাফুজ্জামান আশু, রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী, মাকসুদ খান ও মিজানুর রহমান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা খুলনা বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরে পরিচালক বরাবর আবেদন করেন। ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের আহ্বায়ক কমিটির চার সদস্যের আবেদনের প্রেক্ষিতে খুলনা বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক উভয়পক্ষকে গত ১০ এপ্রিল তার দপ্তরে হাজির হওয়ার নোটিশ দেয়।

৪জন আবেদনকারী স্বশরীরে ও ভার্চুয়ালি বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালকের কাছে পৃথকভাবে জবানবন্দি প্রদান করেন। অপরদিকে অভিযুক্ত এজাজ আহমেদ স্বপন লিখিতভাবে তার বক্তব্য পেশ করেন।

উভয়পক্ষের বক্তব্য ও অভিযোগ পর্যালোচনা করে ১১ এপ্রিল ২০২২ তারিখে বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তর খুলনার পরিচালক (রেজিস্ট্রার অব ট্রেড ইউনিয়ন্স) স্বাক্ষরিত ৪০.০২.০০০০.১০৩.৩৪.২১.২০১৩.৮৪২ নম্বর স্মারকে ভোমরা কাস্টমস্ ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস্ এসোসিয়েশনের আহ্বায়কের পদ থেকে এজাজ আহমেদ স্বপনকে অপসারণ করেন।

একই আদেশে তিনি এসোসিয়েশনের কার্যক্রম সচল রাখা ও আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আহ্বায়ক কমিটির চারজন সদস্যের প্রস্তাব অনুযায়ী মিজানুর রহমানকে আহ্বায়কের পদে নিযুক্ত করেছেন।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ইংরেজি তারিখে ভোমরা কাস্টমস্ ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস্ এসোসিয়েশনের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার কথা থাকলেও সাধারণ সদস্যদের মতামতকে পাশ কাটিয়ে সাধারণ সভায় উপস্থিত হয়ে সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি কমিটি ঘোষণা করেন। ওই কমিটির সভাপতি কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু ও মোস্তাফিজুর রহমান নাসিমকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

নির্বাচন ছাড়াই কমিটি গঠন নিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা লেনদেন হয় এমন খবর পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হওয়ার এক পর্যায়ে ওই ঘোষণাকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন করেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এজাজ আহমেদ স্বপন। রিটের প্রেক্ষিতে শ্রম আদালতের নির্দেশনায় গত ২০ নভেম্বর ২০২১ তারিখে এজাজ আহমেদ স্বপনকে আহবায়ক এবং আশরাফুজ্জামান আশু, মিজানুর রহমান, এএসএম মাকসুদ খান ও রামকৃষ্ণ চক্রবর্তীকে সদস্য করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনের নির্দেশ দেওয়া হয়। এজাজ আহমেদ স্বপন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসোসিয়েশনের নির্বাচন করতে ব্যর্থ হন।

ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের নবগঠিত আহ্বায়ক মিজানুর রহমান জানান, দায়িত্ব পাওয়ার পর গত মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) প্রথম সভায় আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন সম্পন্ন করার, তহবিল তচ্ছরূপসহ একাধিক বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগের কমিটির আহবায়ক এজাজ আহমেদ স্বপন কমিটির অনুমোদন ছাড়াই প্রায় অর্ধকোটি টাকার তহবিল তচ্ছরুপ করেছেন।

ভোটার তালিকা প্রণয়নে ব্যর্থ হয়েছেন। আহবায়ক বাদে ৪ জনের সর্বসম্মতিক্রমে এজাজ আহমেদ স্বপনের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে তাকে অপরসারণের জন্য জেডিএল, খুলনাকে চিঠি দেওয়া হয়। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার সিদ্ধান্তেই আমি আহবায়ক হয়েছি।

অভিযুক্ত এজাজ আহমেদ স্বপন তার বিরুদ্ধে আনীত তহবিল তচ্ছরুপসহ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আসন্ন সংগঠনের স্বাভাবিক নির্বাচন বানচাল করতে তাকে আহ্বায়কের পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে।