পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সাথে সাথে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরটি ভারতের সাথে রপ্তানি-আমদানি কার্যক্রমে একটি বঙ বৃদ্ধি দেখতে পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধানত পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার নিকটবর্তী হওয়ার কারণে। সেখানকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, কলকাতা থেকে স্থলবন্দরের দ‚রত্ব মাত্র ৬৫ কিলোমিটার যেখানে যশোরে দেশের প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোল পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী থেকে ৮৬ কিলোমিটার দূরে।
ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম খান বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধন এবং ভোমরা বন্দরে একটি পূর্ণাঙ্গ কাস্টমস হাউস উদ্বোধনের পর বেনাপোল রাজস্ব আদায়ে শীর্ষস্থান হারাবে। বর্তমানে ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে বার্ষিক রাজস্ব আদায় হয় ৮০০ থেকে ১০০০ কোটি টাকা, আর বেনাপোল বন্দর থেকে আদায় হয় প্রায় ৪৫০০ কোটি টাকা।
মাকসুদ বলেন, কলকাতা ও ভোমরা বন্দরের মধ্যে অল্প দ‚রত্ব ব্যবসায়ীদের পরিবহন খরচ কমিয়ে দেবে। পদ্মা সেতু হয়ে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকার দূরত্বও প্রায় ১০০ কিলোমিটার কমে যাবে। এতে করে আমদানিকৃত পণ্য দ্রুত ও স্বল্প পরিবহন খরচে রাজধানীসহ সারাদেশে চলে যাবে।
তিনি বলেন, “বর্তমানে ভোমরা স্থলবন্দর আমদানিকারকদের তেমন কোনো সুবিধা দেয় না। এই বন্দর দিয়ে ৫৬টি পণ্য আমদানির সুযোগ থাকলেও মাত্র ৩০ থেকে ৩৫টি পণ্য আমদানি করা হয়।”
মাকসুদ অবশ্য উল্লেখ করেন, মূলত কাস্টমস হাউস না থাকায় আমদানিকারকরা এখন পর্যন্ত বন্দরের পুরো সুবিধা ভোগ করতে পারেননি। “তবে আগামী ডিসেম্বরে ভোমরা বন্দরে একটি পূর্ণাঙ্গ কাস্টমস হাউস চালু করা হবে, যা ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করবে যারা বর্তমানে বেনাপোলসহ অন্যান্য বন্দর ব্যবহার করছেন,” তিনি যোগ করেন।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের মতে, দেশে ২৩টি স্থলবন্দর রয়েছে, যার মধ্যে ১৩টি বর্তমানে চালু রয়েছে। ভোমরা ও বেনাপোল রাজস্ব কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ থেকে ৪৫০ ট্রাক ভোমরা বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে পণ্য নিয়ে আসে, যেখানে ৫০ থেকে ১০০ মালবাহী ট্রাক ভারতে পণ্য রপ্তানি করছে। অন্যদিকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন ৩৫০ ট্রাক পণ্য আমদানি হচ্ছে এবং ২০০ ট্রাক পণ্য ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।
ভোমরা ও বেনাপোল বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মোট ৩৫০টি রপ্তানি-আমদানি কোম্পানি ভোমরা বন্দর ব্যবহার করছে এবং ৬০০টি বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করছে। ভোমরা বন্দরের ব্যবসায়ী এজাজ আহমেদ স্বপন বলেন, ভোমরা বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পোশাক, নারকেলের ভুসি, পাটজাত পণ্য এবং প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ ও বেঙ্গল গ্রুপের কিছু পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, “পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক বছরের মধ্যে সেতু এবং একটি নতুন কাস্টমস হাউসের জন্য ভোমরা বন্দরের রাজস্ব আয় বাঙবে।” ভোমরা স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেন, “১৫ একর জমিতে কাস্টমস হাউসের নির্মাণ কাজ চলছে, আরও ১০ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে।”
“দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকার ভোমরা বন্দরের উন্নয়নের জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান হাতে নিয়েছে,” তিনি যোগ করেন। বনাপোল কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার আব্দুর রশিদ মিয়া বলেন, “স্বল্পম‚ল্যে আমদানি-রপ্তানির দিকে ব্যবসায়ীদের ঝুঁকে পড়াটাই স্বাভাবিক। ভোমরা বন্দরের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে পদ্মা সেতু ব্যবসায়ীদের অনেক ঝামেলা ও অর্থ সাশ্রয় করবে।” বাণিজ্য ও রাজস্ব আয়ে ভোমরা বন্দর বেনাপোল বন্দরকে ছাড়িয়ে যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমদানি ও রপ্তানি বৃদ্ধির ফলে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়বে, তবে দুটি বন্দরের তুলনায় পরিস্থিতি অনুমান করা অনেক কঠিন।