মহাকবি মাইকেল মধু সুধুন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ নদ খননের ফলে ভাগ্য বদলে গেছে নয় উপজেলার মানুষের। এই নদে আবারও শুরু হয়েছে জোয়ার ভাটা।
যার ফলে সাতক্ষীরা, যশোর ও খুলনা জেলার কপোতাক্ষ নদের কোল ঘেষে বসবাসরত ২০ লক্ষ মানুষ জলাবদ্ধতার হাত মুক্তি পেয়েছে। মানুষ এখন বাড়িতে বসবাস করছে।
এই সব এলাকার মাঠে সবুজের সমারহ। কপোতাক্ষ পাড়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য দুই ধারে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন ধরণের গাছ। অনেক জায়গায় তৈরি হয়েছে মিনি পার্ক। সাধারণ মানুষ অবসর সময়ে এসব জায়গায় ঘুরতে আসে। এলাকাবাসিদের দাবি কপোতাক্ষ নদ যেন অবৈধ দখল মুক্ত থাকে আর নদে যেন পলি জমে ভরাট না হয় সেটি নিশ্চিত করতে পারলে এলাকাবাসীর দুঃক্ষের দিনের অবসান হবে।
কপোতাক্ষ তীরে বসবাসরত শামীম হোসেন, খলিল, জামালউদ্দীন, হোসেন আলী, খায়রুল জানান, মহাকবি মাইকেল মধু সুধুন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ নদ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই নদে পলি জমে ৮৮ কিলোমিটার ভরাট হয়ে যায়। যার কারণে অবৈধ দখলদাররা একের পর এক নদের জায়গা দখল করতে থাকে। প্রতি বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতে থাকে কপোতাক্ষ অববাহিকায়।
বছরে ৯ মাস জলাবদ্ধতায় কবলে থাকতো সাতক্ষীরার জেলার কলারোয়া, তালা, আশাশুনি উপজেলা, যশোর জেলার চৌগাছা, ঝিকরগাছা, কেশবপুর, মনিরামপুর উপজেলা, খুলনা জেলার পাইগাছা, কয়রা ডুমুরিয়া উপজেলা। মানুষ বাড়ি ঘর ছেড়ে অনত্র বসবাস করতো। এলাকার স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সর্বশান্ত হয়ে গিয়েছিল এই এলাকার মানুষ।
এমন অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় আয়লার পর ২০০৯ সালের ২১ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্যামনগরে এক জনসভায় কপোতাক্ষ পাড়ের জলাবদ্ধতা নিরসনে পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দেন। ঘোষণা অনুযায়ী প্রথম পর্যায়ে সরকার ২শত ৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ করে এবং সেই টাকায় এই নদ খনন ও টিআরএম বাস্তবায়ন করে।
এরপর থেকে এই নদে আগের মত জোয়ার ভাটা চলছে। কপোতাক্ষ নদ এলাকার ২০ লক্ষ মানুষ জলাবদ্ধতার হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে। ফসলে ফসলে ভরে গেছে কপোতাক্ষ পাড়। কপোতাক্ষ পাড়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য দুই ধারে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন ধরণের গাছ। অনেক জায়গায় তৈরি হয়েছে মিনি পার্ক। সাধারণ মানুষ অবসর সময়ে এসব জায়গায় ঘুরতে আসে। মানুষ এখন স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে।
এই সব এলাকার মানুষের দাবি কপোতাক্ষ নদের পাড় যেন অবৈধভাবে দখল না হয়। আর নদে পলি জমে যেন ভরাট না হয়। সে জন্য আবারও এই পলি অপসারণের দাবি জানান এলাকার সাধারণ মানুষ।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ জানান, কপোতাক্ষ ভরাট হওয়ায় ফসল হত না। অনাহারে, অর্ধাহারে থাকতে হয়েছে মানুষকে। তালা উপজেলা সদর জলাবদ্ধতা থাকার কারণে অফিসাররা পর্যন্ত অফিসে আসতে পারতো না। নিচ তালায় কাগজপত্র পানিতে ভিজে যেত। কপোতাক্ষের সাথে সংযুক্ত খাল গুলো খনন করা হয়েছে। এখন আর সেই জলাবদ্ধতা নেই।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন র্বোড-১ নির্বাহি প্রকৌশলি আবুল খায়ের জানান, যশোর থেকে কপোতাক্ষ নদ খনন করা হয়েছে। এই নদ খননের সুফল কপোতাক্ষ অববাহিকার মানুষ পাচ্ছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোডের্র প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মশিউর রহমান জানান, নানা চড়াই উৎরাই পেড়িয়ে কপোতক্ষ নদ খনন করা হয়।
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার চাকলা ব্রীজ থেকে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাখিমারা পর্যন্ত খনন কাজ হয়। এই নদ খননের ফলে এলাকার ৪০ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সুফল ভোগ করছে।
ইতোমধ্যে কপোতাক্ষ নদ খনন প্রকল্পের দ্বিতীয় ফেজে আরও ৫৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই বরাদ্দের কাজ শেষ হলে স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত হবে বলে প্রকৌশলীরা নিশ্চিত করেছেন।