সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে প্রেম করে বিয়ে করার জন্য মেয়েকে টানা তিন মাস ঘরে তালাবদ্ধ রেখে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে পিতা সহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। একই সাথে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই পিতা বাদি হয়ে একই গ্রামের মেয়ের বিবাহিত স্বামী আরিফুল ইসলামসহ তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তাদেরকে জেল হাজতে পাঠিয়েছে বলে এলাকাবাসির অভিযোগ। ঘটনাটি ঘটেছে কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউনিয়নের শীবপুর গ্রামে।
সাতক্ষীরা জেলা জার্নালিস্ট এ্যাসোসিয়েশনের টিম সরেজমিনে গেলে মেয়েটিকে ঘরের মধ্যে তালাবন্দি রেখে নির্যাতনের অভিযোগের সত্যতা মেলে। পরে ভুক্তভোগি মেয়ে মুন্নী জানায়, তাদের গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে আরিফুল ইসলামের সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। আমরা দু’জনই উপজেলার নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী।
প্রেমের সম্পর্কের একপর্যায়ে গত ৯ মাস আগে আমরা দু’জন-দু’জনকে স্বেচ্ছায় গোপনে বিয়ে করি। দীর্ঘ ৬ মাস পর আমার পিতা আমাদের বিয়ের বিষয়টা জানতে পেরে জোরপূর্বক আমাকে দিয়ে আমার স্বামীকে তালাক দেওয়ায়। এরপর আমাকে তালাবদ্ধ করে আটকে রাখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতে থাকে। এভাবে প্রায় তিন মাস নির্যাতন চালাতে থাকে আমার পিতা ও মেঝো চাচাসহ পরিবারের লোকজন। একপর্যায়ে আমার এই নির্যাতনের বিষয়টি চিরকুটের মাধ্যমে অতি কষ্টে প্রতিবেশীর জানায়। পরে এলাকাবাসি নির্যাতনের বিষয়টি জানতে পারে।
মেয়েটি আরও জানায়, তাদের বিয়ের বিষয়টি ভিন্ন খাতে রুপ দেওয়ার জন্য আমার স্বামীর বিরুদ্ধে গত ২৬ জুলাই আমার পিতা প্রথমে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট অভিযোগ করেন। পরে ২৭-৭-২২ তারিখে রাত সাড়ে ৮টায় ছিনতাই ও অপহরণ নাটকে ফন্দি আঁটতে থাকে। এক পর্যায়ে ১৯-৯-২২ তারিখে সাতক্ষীরার আদালতে আমার স্বামী আরিফুল ইসলাম, তার ভাই আনোয়ারুল ইসলাম ও আসাদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অপহরণের চেষ্টা ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন ধারায় সিআর ৪৭২/২২ (কালি:) মামলা দায়ের করে। বর্তমানে আমার স্বামীসহ তারা তিনভাই জেলে প্রহর গুনছে। মেয়েটির দাবি সে আরিফুলকেই চাই। আরিফুল ছাড়া সে বাচঁবে না।
মেয়েটির পিতা সহিদুল ইসলাম জানান, আমার মেয়ে আরিফুলকে বিয়ে করেছে জানতে পেরেই মেয়েকে দিয়ে তালাক দিয়েছি। এ কথা শুনার পর আরিফুলসহ তার ভাইয়েরা প্রায় সময় হুমকি দেয় তার মেয়ে তুলে নিয়ে যাবে। তাই আমি আমার মেয়ে গৃহবন্দী করে রেখেছি। তবে তার উপর কোন নির্যাতন চালানো হয় না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আরিফুলসহ তাদের ভাইদের বিরুদ্ধে কোন মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়নি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান জানান, মেয়েটির সাথে ছেলেটির সম্পর্কের কথাটা শুনেছি, তাদের উভয়ের সম্মতিতে বিয়েও হয়। কিন্তু মেয়ের পরিবার মেনে নেয়নি। একপর্যায়ে মেয়েকে দিয়ে কোর্টের মাধ্যমে ডিভোর্স করায। এরপরে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় তাদেরকে ফাঁসিয়েছে। মামলার বিবরণে উল্লেখিত ঘটনা আমার এলাকায় ঘটেনি।
মামলার স্বাক্ষী নলতা গ্রামের মোজাহার আলীর ছেলে আলম হোসেন ও রহমত আলী বলেন, মেয়ের সাথে ছেলের সম্পর্ক ও বিয়ের ঘটনা জানি তবে ছিনতাই কিংবা অপহরণের বিষয়টি আমরা দেখেনি, মেয়ের বাবার মুখে শুনেছি।
এঘটনায় কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মাদ হালিমুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মেয়েকে ঘরে বন্দী রাখার বিষয়টি জানতে পারে থানার উপ-পরিদর্শকসহ ফোর্স পাঠিয়েছিলাম। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।