ঢাকার ধামরাইয়ের কৃষক মামুদ আলী। প্রতি বছর এ মৌসুমে আমন ধান রোপণ করা হয়। তবে লাভের মুখ দেখেননি তিনি। তিনি ৫ বছর আগে আমন ছেড়ে ৫০ শতাংশ জমিতে আখ চাষ শুরু করেন। এখন খরচ বাদে এক মৌসুমে তার লাভ প্রায় ৩০-৪০ হাজার টাকা।
লাভ ভালো হওয়ায় মামুদ আলীর মতো অনেকেই আখ চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পুরো উপজেলায় শতাধিক আখ চাষি রয়েছে। পাঁচ বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ২০ থেকে ৩০ জন।
কৃষকরা জানান, ধামরাইয়ের তুলনামূলক নিচু জমিতে প্রতিবছর তারা ধান চাষ করেন। তবে কয়েক বছর কোনো লাভ না হওয়ায় অনেকেই আখের চারা রোপণ করে আখ চাষ শুরু করেন। এটি সাফল্যও বয়ে আনে। এ কারণে এখন উপজেলার আমতা ইউনিয়নের আমতা, নয়াচর, বাউখন্দ, জেঠাইলসহ ৬-৭টি গ্রামে আখের ক্ষেত বাড়ছে।
তারা জানান, বিঘা প্রতি গড় খরচ (৩৩ শতাংশ) ২০,০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকা। এ পরিমাণ জমিতে অন্তত ১ হাজার বেতের চাষ হয়। প্রতিটি আখের দাম ২০-৪০ টাকা। বড়গুলো বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ১১ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। যেখানে ৩-৪ বছর আগেও ছিল প্রায় অর্ধেক।
সম্প্রতি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আখ গাছ দেখা যায়। কেউ কেউ মাঠে আখ কাটতে ব্যস্ত। আবার অনেক মাঠে পাইকাররা এসে আখ কিনছেন।
কথা হয় কৃষক মামুদ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের গ্রামে অনেকেই আখ চাষ করেছেন। অধিকাংশ কৃষকই ক্ষেত থেকে আখ বিক্রি করেন। আমি ৫০ এর দশকে চাষ করেছি। ফলন ভালো হওয়ায় দামও বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
কৃষক জুলহাস উদ্দিন বলেন, এবার আমাদের আখের ফলন ভালো হয়েছে। ৩৬ শতাংশ চাষ করেছি। আমন করতাম, আখের সমান খরচ হতো। বর্তমানে ৪০ হাজার টাকার আখ বিক্রি করেছি। ক্ষেতের সব আখ বিক্রি করে অন্তত ৪০ হাজার টাকা বেশি পেতে পারি। গত বছরও একই রকম লাভ হয়েছে।
কথা হয় উপজেলার কাওয়ালী পাড়া বাজারে আখ ক্রেতা জামাল উদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন, ক্ষেত থেকে তোলা প্রতিটি আখের হিসাব করে দর কষাকষি করা হয়। এরপর ওই সাইজের আখ আলাদা করে গাড়িতে করে বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। বড় আকারের প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১০০ টাকায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম জানান, ধামরাইয়ের কৃষকরা গত কয়েক বছর ধরে আখ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। এখানে উৎপাদিত আখ মূলত মুখে মুখে খাওয়ার জন্য বাজারে বিক্রি করা হয়। এতে লাভ বেশি হয়। এ কারণে অনেকেই আখ চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। দক্ষতা, যত্ন, সঠিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগে আখের ফলন ভালো হয়।