সাড়ে দশটা বাজে। রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে পাঞ্জাবি পায়জামা টুপি পরা এক যুবককে সিএনজি চালিত অটোরিকশার খোঁজে বিএসএমএমইউ সংলগ্ন ওভার ব্রিজের সামনে দিয়ে বারডেম হাসপাতালের দিকে ছুটতে দেখা গেছে। যতবার তিনি একটি অটোরিকশাকে সামনের দিকে যেতে দেখেন, ততবারই তিনি একই অটোরিকশার জন্য আরও ৮/১০ জন যাত্রী দর কষাকষি করতে দেখেন।
এক জনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, জরুরি কাজে তাকে দ্রুত উত্তরায় যেতে হবে। কিন্তু উপযুক্ত পরিবহন খুঁজে পাচ্ছেন না। দশ মিনিট আগে এক সিএনজি চালক ৮০০ টাকা দাবি করেন। কিন্তু আমার কাছে এত টাকা নেই। ধর্মঘটের কারণে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় জরুরি কাজে কখন ও কীভাবে যাব বুঝতে পারছি না।
এই যুবকের মতো অসংখ্য মানুষকে শাহবাগ মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। কেউ রিকশাচালককে, কেউ ভাড়া করা মোটরসাইকেল চালককে, কেউ পিকআপ ভ্যানের চালককে তাদের গন্তব্যে নিয়ে যেতে বলছেন। সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও ভাড়া করা মোটরবাইক দিনের তুলনায় রাতে বেশি ভাড়া নিতে দেখা যায়।
এ দৃশ্য শুধু শাহবাগের নয়, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে গণপরিবহন ধর্মঘটের ফলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার মানুষ ঘরে ফিরেছে।
রাজধানীর নিউমার্কেট, আজিমপুর, ধানমন্ডি, এলিফ্যান্ট রোড ও শাহবাগ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন মোড়ে যানবাহনের অপেক্ষায় অসংখ্য মানুষ। কেউ কেউ অতিরিক্ত ভাড়ায় সিএনজি চালিত অটোরিকশা, মোটরবাইক বা রিকশায় করে গন্তব্যে ছুটছেন। আবার কেউ হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছিল। বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল ও গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
মিরপুরের বাসিন্দা হায়দার আলী রাজধানীর নিউমার্কেটের একটি পোশাক বিক্রেতার কর্মচারী। তার সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, আমি আমার অর্ধেক বেতনে কাজ করেছি। করোনা কমলেও এখন পর্যন্ত আগের বেতন পরিশোধ করছেন না মালিকপক্ষ। বাজার খোলা থাকায় দুবার পায়ে হেঁটে ভ্যান ভাড়া করে আজ বাজারে এসেছি। তিনি জানান, রাতে কীভাবে সেখানে যাওয়া যায় তা নিয়ে চিন্তিত।
গত চারদিন ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি ব্লকে হৃদরোগে আক্রান্ত বাবার সঙ্গে ছুটছেন মাতুয়াইলের বাসিন্দা আফসানা বেগম। তিনি জানান, তার বাবার জন্য তার কয়েকজন ভাইবোন প্রতিদিন বাড়ি থেকে হাসপাতালে আসতেন এবং তাদের দেখাশোনা করতেন। গণপরিবহন ধর্মঘটের কারণে এত দীর্ঘ যাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হওয়ায় গত রাত থেকে আজ রাত পর্যন্ত একাই জীবনযাপন করছেন তিনি। কিছুক্ষণ আগে তার অন্য বোন হাসপাতালে আসার পর সে বাড়ি ফিরছে।
“আমাদের মতো দরিদ্র মানুষ বাস ছাড়া অন্য কোনো পরিবহনের কথা ভাবতে পারে না,” তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে তিনি এখন কোন গাড়িতে যাবেন তা নিয়ে চিন্তিত।