যশোরের শার্শা উপজেলায় আধুনিক পদ্ধতিতে দেশি শিং মাছ চাষ করছেন তিন বন্ধু। যদিও মৎস্য অধিদপ্তর থেকে তাদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই। এরপরও তাদের মাছ চাষ দেখে এলাকার আরও অনেকে শিং মাছ চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
স্ব-শিক্ষিত ও বেকার তিন বন্ধু হলেন, উপজেলার স্বরূপদাহ গ্রামের মৃত মতলেব বিশ্বাসের ছেলে আফতাব হোসেন (৫০), শিবচন্দ্রপুরের ওয়াপদা খালের বাসিন্দা মৃত রায়হান সরদারের ছেলে আবদুর রশিদ (৪৫) ও সোহাগ হোসেন (৩৫)। মতিয়ার রহমানের ছেলে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৩২ শতাংশ পুকুরে প্রতি শতাংশে চার গ্রাম ওজনের পাঁচ হাজার শিং মাছের পোনা মজুত রয়েছে। দিনে দুবার ফিশ ফিড প্রয়োগ করেন (সকাল ও রাতে)। পুকুরের ভিতর মাছের বিষ্ঠা পরিষ্কার করার জন্য রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির মেশিন।
আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সারাদিনের মাছের বিষ্ঠা পানি থেকে সরিয়ে জৈব সার হিসেবে পুনরায় ব্যবহার করা হয়। এই জৈব সার দিয়ে মাছের খামারের পাশে বিভিন্ন সবজিও চাষ করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে শিং মাছ চাষে সাফল্যের স্বপ্ন দেখছেন শার্শার তিন বন্ধু। তাদের বন্ধু আব্দুর রশিদ আধুনিক প্রযুক্তিতে বিপন্ন শিং মাছ চাষে আগ্রহ সৃষ্টি করেছেন।
জানা গেছে, তিন বন্ধুর একজন আব্দুর রশিদ ভারতে মহারাষ্ট্রের বেলাপুরে একটি বড় মাছের হ্যাচারিতে পাঁচ বছর ধরে কাজ করছিলেন। সেখানে মাছের পরিচর্যার পাশাপাশি তিনি শিং মাছ চাষের কৌশলে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে শুরু করেন এবং পূর্ণ অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। তারপর নিজেই শিংমাছ চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন।
কিন্তু আব্দুর রশিদের পুঁজির অভাবে দুই বন্ধুর সহযোগিতায় প্রথমে তিন বন্ধু মিলে ১৫ কাঠা জমির একটি পুকুর ইজারা নিয়ে চলতি বছরের মার্চ মাসে পুকুর তৈরি করে মাছের পোনা ছেড়ে দেন। কয়েকদিনের মধ্যেই তারা খাদ্য তৈরির মেশিন তৈরি করে এবং নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে বয়লার ও পোল্ট্রি মুরগির নাড়ী, কেঁচো, শামুক, লবণ, খৈল, চিটা গুড় ও মধুর মিশ্রণ তৈরি করে মাছের খাবার তৈরির পরিকল্পনা করেন।
চরম অর্থকষ্ট নিয়ে শুরু হয় তাদের শিং মাছ চাষের যাত্রা। তিন মাসে মাছের ওজন ছিল এক লক্ষ এক কেজি, এখন প্রতি কেজি ১০টি মাছ।
মাছ চাষী আব্দুর রশিদ জানান, রক্ষণাবেক্ষণের ত্রুটির কারণে শিং মাছ দুই থেকে তিন মাস পর লেজ বাঁকিয়ে ফেলে। যে কারণে মাছের বৃদ্ধি আসে না। যেই মাছ চাষ করুক না কেন, চাষী কখনই সফল হবে না কারণ সে যত্ন করতে জানে না। শার্শা মৎস্য অফিস থেকে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমাদের শিং মাছ চাষ পরিদর্শন করেন এবং কিছু পরামর্শও দেন।
রশিদ আরও বলেন, শিং মাছ চাষে কেউ সাহায্য পেতে চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা অবশ্যই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব।
তিন বন্ধু জানায়, শার্শা উপজেলায় শিং মাছের চাষ খুবই কম এবং চাষ পদ্ধতিও নতুন। কোনো সরকারি সহায়তা ছাড়াই তিনজন স্বশিক্ষিত বন্ধু চরম কষ্টে টাকা ধার করে মাছ চাষের আশ্রয় নেন। শিং মাছ চাষ করে এমন কেউ প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি।
তবে আমরা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা করছি ইনশাআল্লাহ। আমরা আধুনিক প্রযুক্তিতে দেশীয় শিং মাছ এখানে ব্যাপক হারে চাষ করতে চাই। কিন্তু শুধুমাত্র ইচ্ছাশক্তি দিয়ে তা সম্ভব নয়। টাকাও দরকার। তবে সরকারের কাছ থেকে পাওয়া ক্ষুদ্রঋণের সাহায্যে আমরা আরও সফলভাবে এগিয়ে যেতে পারব।
শার্শা উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, স্বরূপদা গ্রামের ওয়াপদা খালে আব্দুর রশিদ ও তিন বন্ধু শিং মাছ চাষ করছেন শুনে কয়েকবার গিয়ে দেখি।
এ সময় শিং মাছ চাষের প্রযুক্তিগত দিক নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছি। আমি তাদের সরকারের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি এবং তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চাইলে আমরা তাদের সহযোগিতা করব।