ভোলায় গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে কৃষকরা দুই মাসে বিপুল ফলন পেয়েছেন। ব্যারি হাইব্রিড টমেটো সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ফলে তারা ভালো দাম পাচ্ছে। কৃষকরা জানান, অধিক ফলনের কারণে তারা এই টমেটো চাষ করে লাভবান হয়েছেন। তাই ভবিষ্যতে আরো জমি চাষ করার পরিকল্পনা আছে তাদের।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাঠ গবেষণা বিভাগের ভোলার অফিসের মতে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে অভিযোজন পরীক্ষা, উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং সম্প্রদায় ভিত্তিক পাইলট উৎপাদন কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশে টমেটো চাষ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের অন-সাইট গবেষণা বিভাগ ভোলা গত বছর তিনজন কৃষকের সাথে পরীক্ষামূলকভাবে বার্লি হাইব্রিড টমেটো চাষ করেছিল। পরীক্ষামূলক সাফল্য পাওয়ার পর, ভোলা সদর, দৌলতখান এবং চর ফ্যাশন উপজেলার ১০ জন কৃষক এ বছর এই জাতের টমেটো চাষ করেছেন।
দৌলতখান উপজেলা উত্তর জয়নগর ওয়ার্ড নং ২ উত্তর জয়নগর গ্রামের কৃষক মো. জাহাঙ্গীর জানান, প্রথমবারের মতো তিনি প্রায় ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ১০ শতাংশ জমি এবং ৮ ও ১০ বার্লি হাইব্রিড টমেটো চাষ করেছেন। প্রায় দুই মাসে জমিতে ব্যাপক ফসল হয়েছে। তিনি একবার মাঠ থেকে বাছাই করা ৫,০০০ টাকার টমেটো বিক্রি করছেন। আমি এখনও আশা করি প্রায় ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারব।
তার স্ত্রী সালমা আক্তার বলেন, আমরা স্বামী -স্ত্রী হিসেবে একসঙ্গে টমেটো ক্ষেতে কাজ করেছি। মাঠের ফলন এখন বিক্রি শুরু হয়েছে। বাজারে বিক্রি করে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা পাচ্ছি। আশা করি ভবিষ্যতে আমরা আরো জমিতে বার্লি হাইব্রিড টমেটো চাষ করব।
ভোলা সদর উপজেলা উত্তর দিঘলাদ ইউনিয়ন ৬ নং ওয়ার্ড এর কৃষক মনির হোসেন জানান, তিনি শীতের টমেটো চাষ করতেন। কিন্তু সেই টমেটো চাষ করে তিনি খুব বেশি লাভ করতে পারেননি। এই বছর তিনি বারি হাইব্রিড -৪, ৮, ১০ এবং ১১ জাতের টমেটো চাষ করেছেন কারণ তিনি ভোলা মাঠ গবেষণা বিভাগ থেকে বীজ, সার এবং ওষুধ সহ বিভিন্ন সহায়তা পেয়েছেন। প্রায় দুই মাসের মধ্যে তার মাঠ টমেটো দিয়ে ভরে যায়।
তিনি আরও জানান, বাজারে বার্লি টমেটোর চাহিদা বেশি। এখন পর্যন্ত তিনি ৫০ হাজার টাকায় টমেটো বিক্রি করেছেন। আপনি এখনও ২ লক্ষ টাকায় টমেটো বিক্রি করতে পারেন।
একই এলাকার কৃষক মো. রবিউল ইসলাম জানান, এই টমেটো ক্ষেতে সারের তেমন প্রয়োজন নেই। এবং ক্ষেতে কম পোকামাকড়। যাইহোক, আমরা পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য টেপ ব্যবহার করছি। এটি আমাদের ক্ষেত্রকে অনেক উপকৃত করছে।
এলাকার সাধারণ কৃষক মো. মিন্টু বলেন, আমি শুনেছি মনির হোসেন লাবন তাদের এলাকায় বারি হাইব্রিড জাতের টমেটো চাষ করছেন। আমি আশা করি ভবিষ্যতে এই জাতের টমেটো চাষ করব।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ভোলার সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা গাজী নাজমুল হাসান বলেন, গত বছর পরীক্ষামূলক চাষের সাফল্যের পর কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে এটি চাষ করতে পেরেছে। প্রতিটি কৃষক ভাল অর্থ উপার্জন করছে। তাদের দেখে অনেক নতুন কৃষক বার্লি হাইব্রিড টমেটো চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
তিনি আরও বলেন, “আমরা ভবিষ্যতে আরো কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা দেব যাতে তারা আরও বেশি জমিতে এই জাতের টমেটো চাষ করতে পারে।”
ভোলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মোস্তফা সোহেল বলেন, কৃষকরা পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি বারি হাইব্রিড টমেটো ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন। কিন্তু খুচরা বাজারে টমেটো ১২০ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে। যাইহোক, আমরা সব সম্ভাব্য উপায়ে কৃষকদের সহযোগিতা করবো যাতে তারা পাইকারি বাজারে তাদের টমেটোর উচ্চমূল্য পায় এবং যদি কৃষকরা অন্য জেলায় পাঠাতে চায়।