বিগত সরকারের আমলে গ্রামীণ উন্নয়ন সবসময়ই প্রশ্নাতীত ছিল বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরাই প্রথম গ্রামীণ উন্নয়নকে উন্নয়নের মূলধারায় সংহত করেছিলাম। আমাদের ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে, আমরা ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ থিমকে সামনে রেখে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক শহুরে সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ মন্তব্য করেন। টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ দেশের প্রায় সব গ্রামেই পাকা রাস্তা তৈরি হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত, গ্রামীণ এলাকায় ৬৬,৭৫৫ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন ৩,৯৪,০০০টি সেতু ও কালভার্ট ১,৭৬৭টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন ১,০২৫টি সাইক্লোন সেন্টার এবং ৩২৬টি উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
তিনি বলেছিলেন যে ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ৪৫৮ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক চতুর্থ বা তার বেশি লেনে উন্নীত করা হয়েছে। আরও ৮৮৭ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ৪৬.৭৩ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়েকে একটি আধুনিক ও আধুনিক গণপরিবহন হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৩,৩৭১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৩৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ঢাকার চারপাশে বৃত্তাকার রেললাইন স্থাপনের কাজ চলছে। ২০০৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ৪৫১ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে এবং ১,১৮১ কিলোমিটার রেলপথ পুনর্বাসন করা হয়েছে। ৪২৮টি নতুন রেলসেতু নির্মাণ করা হয়েছে। যমুনা নদীর ওপর ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্স তার বহরে যুক্ত হয়েছে ১২টি নতুন অত্যাধুনিক বোয়িং ও ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ। ৩টি ড্যাশ-৮-৪০০ বিমান যোগ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করে কাঙ্খিত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আমরা ইতিমধ্যে ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ নামে একটি পরিকল্পনা চালু করেছি।” এই পরিকল্পনার আওতায় ৬৪টি জেলায় প্রায় ৪,৪৩৯ কিলোমিটার নদী, খাল ও জলাশয় খনন করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। সারাদেশে ১৮,০০০ কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে গ্রামীণ নারী ও শিশুসহ সাধারণ জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়া ৩০ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। আমাদের স্বাস্থ্যসেবার সম্প্রসারণ ও মান উন্নয়নের ফলে, ২০১৯-২০ সালে জনগণের গড় আয়ু বেড়ে ৭২.৮ বছরে উন্নীত হয়েছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৮ এবং এক বছরের কম বয়সী মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ১৫-এ নামিয়ে আনা হয়েছে। মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লক্ষ-এ ১৬৫ জনে নেমে এসেছে।