ওরিয়েন্টেশনের নামে নোট-গাইড বিক্রি করার কৌশল ভেস্তে গেছে ‘পপি লাইব্রেরি’ নামক একটি নোট-গাইড প্রকাশনা ও বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের। সপ্তাহ খানিক ধরে বেশ তারা তোড়-জোড় করছিলেন। আজ শনিবার সাতক্ষীরা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজন করা হয়েছিল ওরিয়েন্টেশনের নামে মধ্যহ্ন ভোজের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, প্রত্যেক স্কুল থেকে তিনজন করে শিক্ষক নিয়ে প্রশাসনের কোন অনুমতি ছাড়াই ওরিয়েন্টেশনের আয়োজন করেছিল ‘পপি লাইব্রেরি’। এতে জনপ্রতি এক প্যাকেট বিরিয়ানি ও ৫০০ টাকা দেওয়ারও প্রস্তুতি ছিল পপি লাইব্রেরির। উদ্দেশ্য আগামী বছর থেকে নতুন শিক্ষাক্রমের নোট-গাইড বই বিক্রি করা।
সূত্র জানায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত নোট-গাইড স্কুলে স্কুলে বিক্রি করতে কোটি টাকার বাণিজ্য করতে মরিয়া হয়ে মাঠে নামে একটি চক্র। আগামী ২০২৩ সাল থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন শিক্ষাক্রমকে সামনে রেখে জামাত-বিএনপি সমর্থিত একটি শিক্ষক সংগঠন সক্রিয় এই মিশনে।
‘পপি লাইব্রেরি’ নামক একটি নোট-গাইড প্রকাশনা ও বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে আজ মধ্যহ্নভোজ ও আলোচনা সভা করার কথা ছিল।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সাতক্ষীরায় শিক্ষকদের ওরিয়েন্টেশনের নামে ওই ভোজের আয়োজন করা হয়। পপি লাইব্রেরির ওরিয়েন্টেশন আয়োজনের কোনো সরকারি অনুমোদন নেই। এ কাজে পপি লাইব্রেরির ও জামায়াতে ইসলামী নিয়ন্ত্রিত ওই শিক্ষক সংগঠন জেলা সদদের দুই জনপ্রতিনিধি ও দুই সরকারি কর্মকর্তাকে সম্পৃক্ত করে শিক্ষকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে পত্র দেওয়া হয়।
শিক্ষক এবং সাংবাদিকদের এই অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলা সদরে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পৃক্ত এক তরুণ শিক্ষককে। যিনি শহরের একটি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। সরকার নোট-গাইড নিষিদ্ধ করলেও স্থানীয় পর্যায়ে এরা সরকারের চেয়ে শক্তিশালী মনে করে বলে সূত্রের দাবি। এসবের নেপথ্যে আর্থিক বিনিয়োগ করছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘পপি লাইব্রেরি’।
এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলার একাধিক শিক্ষক নেতা বলেন, জামায়াতে ইসলামীর পৃষ্টপোষকতায় জেলার কিছু সংখ্যক শিক্ষক এই অনৈতিক কাজের সাথে সম্পৃক্ত। তারা আর্থিক সুবিধা নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল।
পপি লাইব্রেরির আঞ্চলিক ম্যানেজার শেখ আবদুল হাদি বলেন, আমরা এই অনুষ্ঠানে জেলার শিক্ষকদের ২০২৩ এর নতুন কারিকুলাম বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন করেছি। আর আমাদের এমপিকে জেলার শিক্ষকরা কখনও দেখেনি তাই পরিচয় করাতে চেয়েছি। আর সাংবাদিকদের দাওয়াত দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় একজন শিক্ষককে।
নবারুণ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মালেক জানান, ‘আমি একটি দাওয়াতপত্র পেয়েছি মাত্র। এর বাইরে আর কিছু জানি না।’
সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: জাহিদুর রহমান বলেন, ‘আমাকে না জানিয়ে চিঠিতে আমার নাম ছাপিয়েছে। আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি জানি না।’
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এসএম আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। অনুমতি না নিয়েই তারা আমার নাম দাওয়াতপত্র ছেপেছে। কোনো নোট-গাইড প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, কর্মশালা বা ওরিয়েন্টেশন করতে পারে না।
নতুন কারিকুলামের শিক্ষাক্রম বিষয়ে এনসিটিবি, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কাজ করছে। আমি অনুষ্ঠানে যাবো না এবং অনুষ্ঠান বাতিল করার জন্য বলেছি।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, এই ওরিয়েন্টেশন সম্পর্কে আমার জানা নেই। কোনো নোট-গাইড প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, কর্মশালা বা ওরিয়েন্টেশন করতে পারে না। এটি শিক্ষা অধিদপ্তরের কাজ। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’
এদিকে শুক্রবার রাতে একাধিক শিক্ষক জানান, শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে মোবাইল ফোনে প্রত্যেক স্কুলের প্রধান শিক্ষককে শনিবারের প্রোগ্রাম বাতিল করা হয়েছে বলে তাদেও জানানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের উদ্ধৃতি দিয়ে শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন, ‘জেলা প্রশাসক পপি লাইব্রেরির কথিত ওরিয়েন্টশন বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।’