সাতক্ষীরার তালায় যৌতুক রোগে আক্রান্ত হলো প্রেমিক স্বামী। আর প্রেমের বলি হয়ে আশাগুলো নিরাশায় পরিণত হলো প্রেমিকা আশা মন্ডলের। পাঁচ লক্ষ টাকা যৌতুক না পেয়ে গায়ে ফুটন্ত গরম পানি ঢেলে দিয়ে হত্যার চেষ্টার ৮ দিনেও হয়নি মামলা, কাতরাচ্ছে হাসপাতালের বেডে।
এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মাগুরা গ্রামে। তবে গণমাধ্যমের কাছ থেকে খবর পেয়ে রাতেই হাসপাতালে দেখতে যান জেলার শীর্ষ আইন কর্মকর্তা পিপি এ্যাডভেকেট আব্দুল লতিফ। রাতেই তৎপর হয়ে উঠেন তালা থানার পুলিশ। তালা থানার ওসি চৌধুরি রেজাউল করিম জানান, রাতেই মামলা হয়েছে। আসামীদের আটকের চেষ্টা চলছে।
জানাযায়, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তালা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী আশা মন্ডল, সে ঘোনা গ্রামের প্রদীপ রায়ের মেয়ে । গত ৩ বছর আগে কলেজে যাওয়া আসার পথে প্রেমের ফাঁদে জড়িয়ে পড়ে একই উপজেলার মাগুরা গ্রামের প্রভাত দাসের ছেলে বিপ্লব এর সাথে। অবশেষে প্রেম থেকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয় তারা। বিয়ের পর উভয় পক্ষই অভিভাবকদের এড়িয়ে বছর খানেক বাইরে থেকে পারিবারিক সমঝোতায় তারা বাড়িতে আসে। শুরু হয় নতুন দাম্পত্ত জীবন।
শুরুতেই আশার বাবা নগদ টাকা আর বিভিন্ন জিনিসপত্রে অন্তত ৩ লক্ষ টাকার যৌতুক দেয়। এরপর যৌতুকের খড়গে অস্থিত আশা। আশার সংসার নিরাশায় পরিণত হয় আরও ৫ লক্ষ টাকা যৌতুক দিতে না পেরে। তারই জের ধরে চলছিল সংসারে অশান্তি। গত ১০ নভেম্বর সকালে স্বামী বিপ্লব কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে ফুটন্ত গরম পানি স্ত্রীর শরিরে ঢেলে দেয়। এতে শরিরের অর্ধেক অংশ পুড়ে যায়। এসময় তার মা এবং বোন পাশেই থাকলেও ভ্রুক্ষেপ করেনি তারা।
তবে ঘটনার পর থেকে ঘরের মধ্যে ২দিন আটকে রেখে ছিলো, তার দেয়নি কোনো রকম চিকিৎসা। খবর পেয়ে আশার বাবা মেয়েকে আনতে গেলে তাকেও লাঞ্ছিত করা হয়। তবুও জোরপূর্বক এনে ১১ নভেম্বর সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসা চলছে কিন্তু সুস্থ্য হতে অনেক সময় বাকী বললেন, আশার এই চিকিৎসক।
এদিকে আশা রাণী জানান, নেশাখোর যৌতুক লোভি বিপ্লব- এর সাথে প্রেম করে বিয়ে করাটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। অবশেষে যৌতুকের জন্য হত্যার চেষ্টার অভিযোগ আনেন নির্যাতিতা এই নারী।
তার মা লতিকা রাণী মন্ডল জানান, যৌতুকের জন্য আমার মেয়েকে নানাভাবে চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এসব নির্যাতন সয্য করতে না পেরে শ্বশুর বাড়িতে যেতেই নারাজ ছিল আশা। তারপরও আমরা তাকে শ্বশুর বাড়িতে পাঠাতাম।
আশার বাবা প্রদ্বীপ কুমার জানান, আমার মেয়ে সম্পর্ক করে বিয়ে করায় আমরা মেনে নেয়নি। তারপরও আলোচনার মাধ্যমে মেনে নিলেও যৌতুকের চাপে বিভিন্ন সময় তাকে হত্যার চেষ্টা করে আসছিল জামাইসহ তার পরিবার। এজন্য তিনি প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান।
আশার কাকা পবিত্র মন্ডল জানান, আমাদের মেয়েকে আনতে যেয়ে আমরা হামলার শিকার হই মেয়ের শ্বশুর বাড়ির লোকজনের হাতে। আমরা মেয়েকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করি। ঘটনার সুষ্ট তদন্ত এবং বিচার চান তিনিসহ তার পরিবার।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শেখ ফয়সাল আহমেদ জানান, নির্যাতিত আশাকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করে। তার শরিরের ৪৫ ভাগ পুড়ে গেছে। তবে বর্তমানে তার অবস্থা ভাল জানালেন চিকিৎসক।
তালা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) চৌধুরি রেজাউল করিম জানান, অতীতে ৩ লক্ষ টাকা যৌতুক নিয়েছে এবং আরও ৫ লক্ষ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ সৃষ্টির এক পর্যায়ে গায়ে ফুটন্ত গরম পানি ঢেলে হত্যার চেষ্টা করেছে।
ভিকটিমের পরিবার পুলিশকে অবহিত করেনি। ফলে পুলিশ জানতো না। সন্ধ্যায় খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে আটকের চেষ্টা করছে। এবিষয়ে রাতেই তালা থানায় একটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এমন ন্যাক্কার জনক ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত এবং বিচার দাবী করেছে নির্যাতিতা আশা রাণীসহ তার পরিবার।