সাতক্ষীরার কলারোয়ায় দিগন্তজুড়ে শোভা পাচ্ছে হলুদের সমারোহ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাঠের পর মাঠ যেন হলুদ বর্ণে ঢেকে গেছে সরিষা ফুলের দোল খাওয়া গাছগুলো।
সবুজ সরিষার গাছের হলুদ ফুল সাতসকালের রোদে যেন ঝিকিমিকি করছে। ফসলী মাঠে সরিষা চাষ আর মৌমাছি থেকে মধু সংগ্রহের কর্মযজ্ঞতায় কর্মব্যস্ত এখন প্রান্তিক কৃষকেরা।
আর এখন বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বেশি থাকায় ও সরিষা তেলের চাহিদা বাড়ায় চাষীরা এবার আগ্রহ করে জমিতে সরিষার চাষ করছেন। আমন ধান কাটার পর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে কলারোয়ায় সরিষার বাম্পার ফলন আর ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন কৃষকরা।
কলারোয়া উপজেলার গয়ড়া গ্রামের কয়েকজন সরিষা চাষী জানালেন, ‘ফলন ভালো পাওয়ার আশায় এবার উন্নত জাতের সরিষা জমিতে চাষ করেছি। এখন সরিষা গাছের যে অবস্থা দেখছি, তাতে ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এসময় মনিরুল ইসলাম নামের এক সরিষা চাষী বলেন, ‘সরিষা চাষে কম খরচ, কম পরিশ্রম আর কম সময়ে সরিষা চাষ করা যায় বলে এটি অত্যন্ত লাভজনক একটি ফসল। প্রতি বিঘা জমি থেকে চলতি মৌসুমে ৬ থেকে ৮ মণ হারে সরিষা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে বর্তমানে বাজারে সরিষার দামও ভালো রয়েছে। তাই এবার সরিষা চাষীরা অনেক লাভবান হবেন এমনটায় আশা করা হচ্ছে।’
প্রান্তিক পর্যায়ের কয়েকজন কৃষক জানান, ‘তৈল জাতীয় ফসল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে চলতি বছরে সরকার থেকে বিনামূল্যে কৃষি প্রণোদনা হিসেবে যে বীজ ও সার দেয়া হয়েছে, সেটা পুরোপুরি সঠিকভাবে বিতরণ করা হয়নি। অনেক প্রকৃতচাষীরা পায়নি এই বীজ ও সার। কিছু কিছু এলাকায় মুখ চিনে চিনে কৃষি প্রণোদনা বিতরণ করা হয়েছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। শুরুতেই সরিষা ক্ষেতে পোকা-মাকড়ের আনাগোনা দেখা দিলেও মাঠ পর্যায়ে সরিষা চাষীদেরকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে যথাযথ পরামর্শ ও প্রত্যক্ষ কারিগরী সহযোগিতার কারণে সরিষা ক্ষেত অনেকটা রোগ-বালাই মুক্ত।
যথা সময়ে সরকারি পর্যায় থেকে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সরিষার বীজসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ বিতরণ করা হলেও মাঠ পর্যায়ে বেশ কিছু জমি চাষের উপযোগী না হওয়ায় কিছু কৃষক ঠিক সময়ে সরিষা বপণ করতে পারেনি। তবে উপজেলার ১২ টি কেঁড়াগাছি, সোনাবাড়িয়া, চন্দনপুর ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি সরিষা চাষ হয়েছে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।
এব্যাপারে কলারোয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুর রহমান জানান, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার সরিষার বাম্পার ফলন ও কৃষক বাড়তি মুনাফা পাবে বলে আশা করছি।’
এদিকে, সরিষা মাঠে ও আশপাশের স্থানে অগণিত বাক্স রেখে সংগ্রহ করা হচ্ছে মৌমাছি থেকে মধু। মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের মৌ-মৌ গন্ধে মৌমাছির গুনগুন শব্দে ফুলের রেণু থেকে মধু সংগ্রহের দৃশ্য আরেক প্রাকৃতিক অপরূপতা সৃষ্টি করেছে। সবমিলিয়ে হলুদ রংয়ের মাঠজুড়ে সরিষা চাষ আর মৌমাছির মধু সংগ্রহের কর্মযজ্ঞতায় প্রান্তিক চাষীদের কর্মব্যস্ততা বেড়েছে পাল্লা দিয়ে।