পবিত্রতা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম অজু করা। অজু ছাড়া ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত নামাজ আদায় বিশুদ্ধ হয় না। হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাতের চাবি হলো নামাজ। আর নামাজের চাবি হলো পবিত্রতা (অজু)। -(আহমাদ, আহমাদ ১৪২৫২)
অজুর করার সময় অজুর ফরজ ও সুন্নতগুলোর প্রতি খেয়াল রাখা আবশ্যক। কারণ, অজুর চারটি ফরজ মানা না হলে অজুই শুদ্ধ হবে না। আর সুন্নত পালন ছাড়া অজুর সৌন্দর্য থাকে না।
অজুর ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, নুআইম মুজমির (রহ.) বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রা.)-এর সঙ্গে মসজিদের ছাদে উঠলাম। অতঃপর তিনি অজু করে বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় আহ্বান করা হবে, যে অজুর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও মুখমণ্ডল উজ্জ্বল থাকবে। তাই তোমাদের মধ্যে যে এ উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নিতে পারে, সে যেন তা করে।’ (বুখারি, হাদিস : ১৩৬)
অজুর করার সময় যেসব সুন্নত রয়েছে তার একটি হল, শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া। এর বিশেষ ফজিলত রয়েছে। এক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিসমিল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহ পড়ে অজু করলে যতক্ষণ ওই অজু থাকবে, ফেরেশতাগণ তার নামে ততক্ষণ অনবরত সাওয়াব লিখতে থাকবে, যদিও সে কোন মুবাহ কাজে লিপ্ত থাকে। -(তাবারানী সাগীর – ১৯৬)
অজুর ফজিলত সম্পর্কে এক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি কবরস্থানে এসে বলেন, তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। হে কবরবাসী মুমিনরা, ইনশাআল্লাহ আমরাও তোমাদের সঙ্গে এসে মিলব। আমার বড় ইচ্ছা হয় আমাদের ভাইদের দেখি। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমরা কি আপনার ভাই নই? তিনি বলেন, তোমরা তো আমার সাহাবা। আর যারা এখনো (পৃথিবীতে) আসেনি তারা আমাদের ভাই। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনার উম্মতের মধ্যে যারা এখনো (পৃথিবীতে) আসেনি তাদের আপনি কিভাবে চিনবেন?
তিনি বলেন, ‘কেন, যদি কোনো ব্যক্তি সাদা রঙের কপাল ও সাদা রঙের হাত-পাবিশিষ্ট ঘোড়া অনেকগুলো কালো ঘোড়ার মধ্যে মিশে যায় তবে সে কি তার ঘোড়াকে চিনে নিতে পারবে না? তারা বলেন, হ্যাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ।
তিনি বলেন, তারা (আমার উম্মত) সেদিন এমন অবস্থা আসবে যে অজুর ফলে তাদের মুখমণ্ডল, হাত-পা জ্যোতির্ময় হবে। আর হাউসের পাড়ে আমি হব তাদের অগ্রনায়ক। জেনে রাখো, কিছুসংখ্যক লোককে সেদিন আমার হাউস থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে, যেমনিভাবে বেওয়ারিশ উটকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। আমি তাদের ডাকব, এসো এসো। তখন বলা হবে, ‘এরা আপনার পরে (আপনার দ্বিনকে) পরিবর্তন করে দিয়েছিল।’ তখন আমি বলব, ‘দূর হও, দূর হও’। (মুসলিম, হাদিস : ৪৭২)