হৃদয় রায়হান
কুষ্টিয়া চিনি কল লোকসানের বোঝা, অর্থসংকট এবং দেনার দায়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৬০ বছরের পুরোনো কুষ্টিয়ার ঐতিহ্যবাহী চিনিকল।
টানা তিন মৌসুম আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে চিনিকলটিতে। শুধু ২০০১-০২ থেকে ২০১৯-২০২০ অর্থবছর পর্যন্ত ১৯ বছর দেশের বৃহত্তম এই চিনিকলটিতে লোকসান হয়েছে ৪৬১ কোটি টাকা।
২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া, পাবনা, পঞ্চগড়, শ্যামপুর (রংপুর), রংপুর ও সেতাবগঞ্জ (দিনাজপুর) চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধের ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন। চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে চিনিশিল্পের সঙ্গে জড়িত কৃষক ও শ্রমিকরা।
বর্তমানে নষ্ট হওয়ার পথে কুষ্টিয়া চিনিকলের ভারী মেশিনারিজসহ শতকোটি টাকার স্থাপনা। এখন পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে অবসরপ্রাপ্তদের গ্র্যাচুইটি। সে সময় কুষ্টিয়া চিনিকল কর্তৃপক্ষ বলেছিল, অন্য কলকারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যেখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। তবে সেই আশ্বাসের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুষ্টিয়া চিনিকলে ২০২০-২০২১ মৌসুম থেকে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। এ মিলে দৈনিক মাড়াই ও উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ও বার্ষিক মাড়াই ক্ষমতা ছিল ১৫ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু বন্ধের তিন বছর পরও মিলটি চালুতে সরকারি উদ্যোগ না থাকায় মিলজোনের আওতায় আখ উৎপাদন মারাত্মক হ্রাস পেয়েছে। টানা মৌসুম বন্ধ থাকায় চিনিকলের অভ্যন্তরে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা।
জনবল কাঠামো অনুযায়ী কুষ্টিয়া চিনিকলে ১ হাজার ৭৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে এখন মাত্র ২৬ জন কর্মচারী মিল রক্ষায় নিয়োজিত।
জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলা শহর থেকে মাত্র আট কিলোমিটার দূরে জগতি নামক স্থানে ১৯৬১ সালে ২২১ দশমিক ৪৬ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় কুষ্টিয়া সুগার মিলস্। ১৯৬৫-১৯৬৬ মৌসুম থেকে এটি চিনি উৎপাদন শুরু করে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার এ প্রতিষ্ঠানটিকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করে।
মিলের অর্থ বিভাগের তথ্যমতে, লাভজনক এই প্রতিষ্ঠানটি ২০০১ সাল থেকে লোকসানের মুখে পড়ে। এরপর প্রতিবছরই লোকসানের পরিমাণ বাড়তে থাকে। প্রতি মৌসুমে চিনি উৎপাদন অব্যাহত থাকলেও এই মিলে লাভের চেয়ে লোকসানই হয় বেশি। তবে ১৯৯৪-১৯৯৫ অর্থবছরে ২ কোটি ৬১ লাখ ও ৯৫-৯৬ অর্থবছরে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা মিলে লাভ হয়।
এ ছাড়া বিগত ২০০১-২০০২ থেকে ২০১৯-২০২০ অর্থবছর পর্যন্ত গত ১৯ বছরে ৪৬১ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে মিলটি। সরকারের সব কটি চিনিকলেই বর্তমান বাজারদরের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি দামে উৎপাদিত হয় চিনি। কুষ্টিয়া চিনিকলে প্রতি কেজি চিনি উৎপাদনের শেষ মৌসুমে খরচ হয়েছে ২৭৩ টাকা। সেই চিনি বিক্রি হয়েছে মাত্র ৬০ টাকা কেজি দরে।
কুষ্টিয়া চিনিকলের ইনচার্জ হাবিবুর রহমান জানান, আখ মাড়াই বন্ধ ঘোষণার পর থেকে সীমিত পরিসরে মিলের প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। তবে বন্ধ এই মিলে আখ মাড়াই চালু ও চিনি উৎপাদনে সরকারি কোনো নির্দেশনা নেই।