সাতক্ষীরায় ধানের ক্ষেত গুলো দূর থেকে দেখলে মনে হবে ধান পেকে কাটার সময় হয়েছে। কিন্তু তা নয়, ক্ষেতে ছত্রাক আর মাজরা পোকার ব্যাপক আক্রমণে বোরো ধানের এ অবস্থা।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার এ রোগে মাঠের পর মাঠ আক্রান্ত হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক। তারা কোন হিসাব মেলাতে পারছেন না। মাঠের পর মাঠ সোনালী ধানের ক্ষেত এক রাতেই ব্লাস্টের আক্রমনে সাদা হয়ে যাচ্ছে।
কৃষকদের অভিযোগ ভেজাল কীটনাশকে সয়লাব হয়ে গেছে বাজার। এ কারণে দফায় দফায় বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক প্রয়োগ করেও সুফল মিলছে না। ধান পাকার আগ মুহূর্তে এভাবে ধানক্ষেত নষ্ট হওয়ায় শঙ্কিত তারা। একই সঙ্গে ফলন বিপর্যয়েরও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কৃষি বিভাগ বলছে, এটা নেক ব্লাস্ট (ধানের গলাপচা) রোগ। এ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, দিনে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও ভ্যাপসা গরম, রাতে ঠান্ডা ও কুয়াশার কারণে ক্ষেতে নেকব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। কৃষকদের সচেতন ও সঠিকমাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে তালা উপজেলায় ১৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।
গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রতিকূল আবহাওয়ায় (মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, ঘন ঘন বৃষ্টিপাত, রাতে তাপমাত্রা কম ও দিনে ভ্যাপসা গরম) উপজেলার মাঠে মাঠে বোরো ধানগাছে কম-বেশি ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দিয়েছে।
ছত্রাকের আক্রমণে ক্ষেতের ধান আস্তে আস্তে সোনালী ও খয়েরি হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। কৃষকেরা ধানগাছের এ অবস্থাকে গলাপচা রোগ বললেও কৃষি বিভাগের ভাষায় ধানের এ রোগ ‘নেক ব্লাস্ট’ নামে পরিচিত।
তালা উপজেলার ধানদিয়া নগরঘাটা, শাকদহ, তৈলকুপি, চোমরখালী, খলিষখালী, কুমিরা, কাটাখালী এলাকার ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠ ব্লাস্ট আক্রান্ত ধানক্ষেত সোনালী ও খয়েরি আকার ধারণ করেছে। অথচ এই সময়টা ধানক্ষেত সবুজ থাকার কথা। আক্রান্ত ধানক্ষেতগুলোকে দূর থেকে পাকা ধান মনে হলেও কাছে গিয়ে দেখা যায়, ধানের শীষে কোনো দানা নেই। ধান চিটা হয়ে গেছে।
কৃষকরা বলেন, দানা পুষ্ট হওয়ার আগমুহূর্তে ধানগাছের ডগা সোনালি হয়ে যাচ্ছে। এ ছত্রাক দ্রুত ছড়াচ্ছে বলে ওষুধ দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না।
উপজেলার আমতলাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আসাদুল, আলমগীর, আকবার গাজী, খলিষখালী গ্রামের মিজানুর, সুরমান আরও অনেক কৃষক জানান, তাদের মাঠের অর্ধেক বোরো ক্ষেতেই গলাপচা রোগ দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত ক্ষেতের ধান বিবর্ণ হয়ে গেছে।
কৃষক খোকন মোড়ল বলেন, এবারে আমি ১০ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছি। এরমধ্যে সব জমির ধান ব্লাস্ট আক্রান্ত হয়ে ধানের শীষ সাদা হয়ে গেছে। এসব ক্ষেতে বিভিন্ন কোম্পানির দামি দামি কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনো লাভ হয়নি। কৃষকদের দাবি কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক পাঁচ থেকে ছয়বার প্রয়োগ করেও ধান বাঁচাতে পারেননি।
আজিবার রহমান জানান, তিন বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আমি বোরো ধান চাষ করেছি। এ জমিতে ধানচাষ করতে গিয়ে অন্তত: ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। দুইবিঘা জমিতে এবারে ৬ হাজার টাকারও বেশি কীটনাশক প্রয়োগ করেছি। তারপরও ধান ব্লাস্ট আক্রান্ত।
তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন জানান ব্রি ২৮ জাতের ধানে ব্লাস্টের আক্রমন বেশি। আমরা কৃষকদের এ জাতের ধান চাষ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে আসছি। এছাড়া ধানের পোকা ধমনে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সব সময় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।