বিচারপতি তাফাজ্জাল হোসেন (টিএইচ) খান, একজন প্রবীণ আইনজীবী এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, তার ১০২ তম জন্মদিন উদযাপন করেছেন। এ উপলক্ষে ঘরোয়া পরিবেশে পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের নিয়ে কেক কাটা হয়।
বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নিজ বাসভবনে পরিবার, সাবেক প্রধান বিচারপতি, আইনজীবী, আত্মীয়স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে জন্মদিন পালন করেন তিনি।
শুক্রবার (২২ অক্টোবর) তার ছেলে প্রবীণ সাংবাদিক ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী আফজাল এইচ খান এ ঘোষণা দেন। বাবার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।
এ সময় সাবেক প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহাব মিঞা, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এম আই ফারুকী, তার ছেলে অ্যাডভোকেট আফজাল এইচ খান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক কোষাধ্যক্ষ ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রাক্তন বিচারপতি টিএইচ খানকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় তার আগের (২০১৯) জন্মদিনের একটি ছবি পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, “আজ সর্বজন শ্রদ্ধেয় আইনজীবী বিচারপতি টিএইচ খানের জন্মদিন।” শুভ ১০২ তম জন্মদিন, স্যার।
“দুই বছর আগে, ২০১৯ সালে স্যারের ১০০ তম জন্মদিন উদযাপনের ব্যানারে ১০০ রট আউট লেখা ছিল,” তিনি যোগ করেছেন। আমরা সাধারণত কাউকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই। এটা আর স্যারের জন্য প্রযোজ্য নয়। ‘সহস্রাব্দ হোন, স্যার!’
টি এইচ খান ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ঔটি গ্রামে ১৯২০ সালের ২১ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। এর আগে সুপ্রিম কোর্টে নিয়মিত অনুশীলন করলেও বার্ধক্যজনিত কারণে দুই বছর আদালত প্রাঙ্গণে আসেননি। যদিও তিনি বিচারপতি টিএইচ খান নামে বেশি পরিচিত, তার আসল নাম তাফাজ্জাল হোসেন খান।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৫ সালে বিএ অনার্স এবং ১৯৪৬ সালে এমএ পাস করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি আইন পেশায় যোগ দেন। ১৯৫১ সালে হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৬৮ সনে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি আর বিচার বিভাগে যোগ দেননি। তারপর ১৯৭৩ সালে তিনি আইন পেশায় ফিরে আসেন। ১৯৭৪ সালে, তিনি প্রথম সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন।
এরপর ১৯৭৯ সালে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি আইন, শিক্ষা, ধর্ম, ভূমি এবং রাজস্ব এবং ক্রীড়া মন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন। তারপর ১৯৮২ সালে, যখন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সামরিক আইন জারি করেন, তিনি আইন পেশায় ফিরে আসেন। ১৯৮৬ সালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি গ্রেফতার হন।
১৯৯২ সালে, টিএইচ খান জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সদস্য হন এবং একই বছর জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হন। ১৯৯৪ সালে, তিনি দ্বিতীয়বারের মতো সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৫ সালে, তিনি এশিয়া অঞ্চল থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের বিচারক নির্বাচিত হন। ১৯ জুন, ১৯৯৯ পর্যন্ত, তিনি জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর দেশে ফিরে আবার আইন পেশা শুরু করেন।
বিচারপতি টিএইচ খান ১৯৯২ সালে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ২০১১ সাল পর্যন্ত এই পদে ছিলেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান।
বিচারপতি টিএইচ খান আইন পেশায় যোগদানের বছর ২৭ নভেম্বর ১৯৪৭ সালে ঢাকা হাইকোর্টে (বর্তমানে সুপ্রিম কোর্ট) আইনজীবী হিসাবে তার কর্মজীবন শুরু করেন।
১৯৮১সালের ১৫ নভেম্বর তিনি আইন, শিক্ষা, ধর্ম, ভূমি এবং রাজস্ব এবং ক্রীড়া মন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন। এরপর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদের নেতৃত্বে নতুন সামরিক আইন জারি করা হয়। এরপর আইন পেশায় ফিরে আসেন। ১৯৮৬ সালে এরশাদের নির্বাচনের বিরোধিতা করায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
আইন ছাড়াও, টিএইচ খান পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ, ঢাকার জগন্নাথ কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম জীবনে দর্শন ও আইন শিক্ষা দেন।